খাজা রাশেদ,লালমনিরহাটঃ (ইউএনও) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বোন পরিচয়ে হতদরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ, চাকরিসহ বিভিন্ন সরকারি অনুদান পাইয়ে দেয়ার নামে প্রতারণা করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সেই নাসিমা আক্তার স্বপ্নাকে আটক করেছে আদিতমারী থানা পুলিশ।

বুধবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার হ্যালিপ্যাড এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।
আটককৃত নাসিমা আক্তার স্বপ্না আদিতমারী টিএনটি পাড়া হেলিপ্যাড এলাকার নুর ইসলামের মেয়ে বলে জানা গেছে।

এর আগে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) স্বপ্নাকে গ্রেফতারের দাবিতে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করে স্মারকলিপি প্রদান করেন ভুক্তভোগী হতদরিদ্র নারীরা।

অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ হতদরিদ্র বেকার নারীদের স্বাবলম্বী করার প্রতিশ্রুতিতে সেলাইসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও মাসিক ১০ হাজার টাকা করে সম্মানী দেওয়ার নাম করে জনপ্রতি ২/৩ হাজার করে কয়েক শত নারীর নিকট হতে টাকা নেন স্বপ্না।
সেই সাথে সমাজসেবা,মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সমবায় ও যুব উন্নয়ন দপ্তরের বিভিন্ন সরকারি ভাতাসহ নানান সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ৪/৫ হাজার করে টাকা আদায় করে সে।

নাসিমা আক্তার স্বপ্না নিজেকে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বোন পরিচয় দিয়ে নারীদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

শুরুতে নিজেকে ইউএনওর বোন পরিচয় দিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভবনের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে আদিতমারী মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ব্যানার ব্যবহার করে সেখানে প্রশিক্ষণ চালু করেন।
যা দেখে গ্রামীণ হতদরিদ্র নারীরা সত্য বলে মেনে নেয় এবং তার প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়।

এভাবেই পুরো উপজেলাতে প্রতারনার জাল বিস্তার করে নাসিমা আক্তার স্বপ্না হাতিয়ে নেন কোটি টাকা।

কয়েকমাস আগে স্থানীয়রা বিষয়টি ইউএনওকে মৌখিকভাবে অবগত করলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন থেকে ঐ প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেন। এরপর সুচতুর স্বপ্না কৌশলে প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি নিজ বাড়িতে স্থানান্তরিত করেন।
এরি মাঝে প্রথম দফায় প্রশিক্ষণ গ্রহণকৃতরা প্রশিক্ষণের তিন মাস মেয়াদ শেষ হলেও সম্মানী পাননি। এ নিয়ে নারীদের সঙ্গে কয়েক দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে স্বপ্নার।

এদিকে, প্রতিবাদকারী নারীদের শায়েস্তা করতে স্বপ্নার রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। এতেই শেষ নয়,অনেক বেকার নারীকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ৪/৫ লাখ করে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে সে।চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে স্বপ্না নিজেকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নিকটাত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিতেন বলেও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।

চাকরি,সরকারি অনুদান বা প্রশিক্ষণের ভাতা ইত্যাদি না পেয়ে একপর্যায়ে ভুক্তভোগীরা তার প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে প্রথমে বুড়িমারী-লালমনিরহাট মহাসড়কে মানববন্ধন থেকে শুরু প্রতারক স্বপ্নার গ্রেফতার দাবি করেন ভুক্তভোগী শত শত হতদরিদ্র নারী। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদিতমারী ইউএনওকে স্মারকলিপি প্রদান করে প্রতারক স্বপ্নাকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি করেন।

ভুক্তভোগীদের এমন অভিযোগে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসনের নজরে আসে এবং স্বপ্নাকে আটক করতে অভিযান চালায় পুলিশ।

অবশেষে আজ বুধবার দুপুরে নাসিমা আক্তার স্বপ্নাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

মূলত হতদরিদ্র নারীদের থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে ইউএনওর বোন ও সমাজকল্যাণমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়েছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক স্বপ্না পুলিশকে জানিয়েছে। এলাকাবাসীদের দাবি জানান স্বপ্না একজন প্রতারক। প্রতারণার আশ্রয় নিতে সে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয় দেন। তার বিরুদ্ধে অনেক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। প্রতারণা করাই তার পেশা। স্বপ্নার শাস্তির দাবি করেন তারা।

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, হতদরিদ্র নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগে নাসিমা আক্তার স্বপ্নাকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিআর সারোয়ার বলেন,স্বপ্না প্রতারণা করতে বোন পরিচয় দিয়েছে। হতদরিদ্র নারীদের অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.